Homeএখন খবরসুবর্নরেখার কথা -১৯।। উপেন পাত্র

সুবর্নরেখার কথা -১৯।। উপেন পাত্র

দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলায় মকর পরব                               উপেন পাত্র

মকর পরব সীমান্ত বাংলার এক সার্বজনীন লোক পরব।জ্যোতিষ মতে সুর্যের আপাত অবস্থান মকর ক্রান্তি রেখায় হলে মকর সংক্রান্তি।অতীতে এটি অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে হতো,বর্তমানে হয় ৭ই পৌষ তারিখে।আজও অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিকে ছোট মকর বলা হয়।পৌষ সংক্রান্তি হলো বড় মকর।

মকর পরবের জন্য গ্রামবাংলার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।ছোট মকর থেকে শুরু হয় তার প্রস্তুতি, শুরু হয় টুসু ব্রত পালন,শোনা যায় ধামসা-মাদলের মিঠে বোল,চলে ছৌ নাচের আখড়া।পৌষ হলো ভরা ফসলের মাস।আমন ধান,রবিখন্দ ঘরে তোলা হয়।আখের রস ও খেজুর রস জ্বাল দিয়ে নতুন গুড় তৈরি হয়।নতুন গুড়ের সুবাসে চারপাশ আমোদিত হয়।সবই হয় মধুময়–” মধুবাতা ঋতায়তে,মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব:।”

মকর ও টুসু ব্রত একে অপরের পরিপুরক।টুসুগানের সরল প্রাণবন্ত সুর আমোদিত করে।মকর পরবে টুসু বিসর্জন হয়।
টুসু লোককথায়–রুকমিনী বা টুসু এক গৃহস্থ কন্যা,গ্রামের এক কিশোরের সাথে তার আবাল্য প্রণয়। দুই পরিবার আপোষে বর-কনের বিয়ে দেয়।কিন্তু বিয়ের দিনে বাড়িতে ডাকাত পড়ে কন্যাহরণ করে।টুসু কৌশলে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।কিন্তু বরপক্ষ লুণ্ঠিতা কন্যাকে ঘরে তুলতে নারাজ হয়।বর গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস নেয়।বহুকাল পর এক মকর পরবে বর সুবর্ণরেখা তীরে আসে।টুসু খবর পেয়ে ছুটে যায়।বর কনের মিলন হয়।কিন্তু আনন্দ সহ্য করতে না পেরে দুর্বল টুসু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

তাই সীমান্ত বাংলায় টুসুকে ঘরের মেয়ে মনে করা হয়,ব্রতপালন করা হয়।মকর পরবে টুসু বিসর্জন হয়।মকর সংক্রান্তির ভোরে স্নান করা রীতি।এর প্রস্তুতি আগে থেকে চলে।ধান কাটার পর নীচের অংশ(লাড়া) কেটে রাখা হয়।স্নানের জায়গায় গাছের ডাল পুঁতে তার ওপর লাড়া বিছিয়ে দেওয়া হয়।স্নানান্তে আগুন পোহানো হয়।পূর্বে নববর্ষের প্রতীক আম্রমুকুল দেখা রীতি ছিল।স্নানান্তে বাড়ি ফিরে পিঠে ভোজন,মকর পরব তো পিঠে খাওয়ার পরব।

মকর পরবে সারাদিন চলে নানা আমোদ–মোরগ লড়াই,মেড়া লড়াই,কোথাও বা বুলবুলি লড়াই।সন্ধ্যায় বসে কীর্তন,কবিগান বা ছৌ নাচের আসর।পরদিন পয়লা মাঘকে কৃষিবর্ষের সূচনা ধরা হয়।এই দিনকে আইখান বলা হয়,এটি এক শুভদিন।পয়লা মাঘ থেকে মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে মকর মেলা বসে।

RELATED ARTICLES

Most Popular