Homeএখন খবরপরপর দুই শিক্ষাব্রতী প্রিয়জন হারিয়ে শোকস্তব্ধ ডেবরা! আর কত প্রাণ কাড়বে করোনা...

পরপর দুই শিক্ষাব্রতী প্রিয়জন হারিয়ে শোকস্তব্ধ ডেবরা! আর কত প্রাণ কাড়বে করোনা প্রশ্নটা ঘুরছে

নিজস্ব সংবাদদাতা: পর পর ২দিন ডেবরা বাসী হারালেন ২জন প্রিয় মানুষকে। এঁদের একজন ছিলেন সদালাপী ছাত্রদরদী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। অন্য জন একটি বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সম্পদক, বিদ্যালয় ও পড়ুয়াদের উন্নতি কল্পে যিনি শেষ অবধি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে গেছেন। একজন চলে গেলেন করোনা আক্রান্ত অবস্থায় অন্যজন করোনা জয় করে ফিরেও সামলাতে পারলেননা করোনা পরবর্তী কালীন ধকল। দুজনের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে ডেবরার শিক্ষক শিক্ষিকা সহ ছত্রছাত্রীর। প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে অসহায় বেদনার্ত তাঁরা।
অন্যজনকে হারিয়ে স্থানীয় মানুষের চোখে জল। দুজনেরই মৃত্যুতে শোক আছড়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

১৪ই মে, শুক্রবার দুপুর ৩টা নাগাদ মৃত্যু সংবাদ আসে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার মাড়তলার বাসিন্দা মনোরঞ্জন চ্যাটার্জীর। কেশপুর থানার ঘোষডিহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজীর শিক্ষক ছিলেন তিনি। ৬ বছর আগে অবসর নিয়েছিলেন মনোরঞ্জনবাবু। ডেবরার পন্ডিত মহল জানিয়েছেন, চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি কিন্তু শিক্ষক হিসাবে অবসর নেননি। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল তাঁর পাশাপাশি ডেবরা সহ আশেপাশের শিক্ষক মহলের একটি বড় অংশের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল তাঁর। শুধু তাই নয় মাঝে মধ্যেই তিনি হাজির হয়ে যেতেন ছাত্রছাত্রী ও পরিচিত শিক্ষক শিক্ষিকাদের বাড়িতে। দিতেন মূল্যবান পরামর্শ।

মনোরঞ্জন বাবুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে প্রথমে তাঁর ছেলে আক্রান্ত হন করোনায়। এরপরই তাঁর উপসর্গ দেখা দেয়। ১০ মে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। টেস্ট করার পর ডেবরা হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর সঙ্গে সঙ্গে বড়মা হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, সুগার ছিল তাঁর তাই তাঁকে শালবনীতে না নিয়ে গিয়ে আমরা বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলাম ওই বেসরকারি হাসপাতালে। কারন আমরা মনে করেছিলাম শালবনী হাসপাতালে শুধু করোনার চিকিৎসা হয় কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে বহুমুখী চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীনই তাঁর সুগার ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। অথচ তারপরও শুনেছি তাঁকে পায়েস, চিনি যুক্ত চা খেতে দেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী যিনি ডেবরা এলাকারই বাসিন্দা জানিয়েছেন, ১৩ই মে সন্ধ্যায় কথা হয়েছিল স্যারের সঙ্গে। অনকেটাই সুস্থ ছিলেন তখন। বলেছিলেন, ‘কয়েকদিন পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাই, তারপর তোমাদের বাড়ি যাবো।’ এমন কী বাড়ির সবার সাথে ডেকে ডেকে কথা বললেন ফোনেই। এমনই ছিলেন মানুষটা। তারপর শুনি রাতে হঠাৎ হার্ট এটাক হয়ে ভেন্টিলেশনে চলে গেছিলেন। এরপর সব শেষ! কিছুতেই মানতে পারছিনা।” অধিকারী জানান,” দুঃসংবাদটি আসার পরই ওনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলি। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাঁর কন্যার অভিযোগ, প্রায় সুস্থ থাকা বাবার রাতে হঠাৎ কিভাবে হার্ট অ্যাটাক হলো আমরা বুঝতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন অবহেলা নিশ্চয়ই ছিল। বেসরকারি হাসপাতালে অনেক অর্থ দিয়ে বাবাকে সুস্থ করার আশায় ভর্তি করেছিলাম কিন্তু এইসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যাপারে কতখানি সিরিয়াস সে ব্যাপারে সন্দেহ হচ্ছে।”

ওই মাড়তলা স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষিকা কৃষ্ণা করগুপ্ত পাত্র নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘ভাবতেই পারছিনা। এটা কী হল স্যার? আপনি যে আমার বাড়িতে আসবেন বলেছিলেন?’ ডেবরার শিক্ষকদের বক্তব্য, মানুষ সাধারণত যেখানে শিক্ষকতা করেন সেখানেই তিনি শিক্ষক বাকি জায়গায় তিনি আটপৌড়ে হয়েই থাকতে চান। মনোরঞ্জন স্যার চাকরি করতেন কেশপুরে আর বাসিন্দা ছিলেন ডেবরার। কিন্তু কেশপুর বা ডেবরা শুধু নয় সারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শিক্ষকদেরই যেন শিক্ষক ছিলেন তিনি।

এদিকে পরের দিন শনিবার ফের দুঃসংবাদ এসেছে ডেবরার জন্য। মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয়েছে রাধামোহনপুরের বাসিন্দা দেবাশিস হুইয়ের। বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর! রাধামোহনপুর বাজারেই একটি ওষুধ দোকান ছিল তাঁর। যদিও ব্যবসা ব্যবসাই, তাঁর বাইরে সদালাপী, পরোপকারী নির্ভেজাল ভালো মানুষ। স্থানীয় রাধামোহনপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সম্পাদক থাকাকালীন বিদ্যালয় ও আশেপাশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা নিয়েছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং শিক্ষক দুরন্তকুমার দাস জানিয়েছেন, ‘ দিন কুড়ি আগে করোনা ধরা পড়ায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে শালবনী নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে নেগেটিভ হওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয় দিন দশেক আগে। করোনা পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই। কিন্ত শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাঁর অথচ সেখানে অক্সিজেন নেই বলে নিয়ে যাওয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে। খবর এসেছিল ভাল হয়ে উঠছেন। রক্তে অক্সিজেন মাত্রা ৯০% হয়ে গেছিল। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম বাড়ি আসবেন তিনি। কিন্তু শনিবার সকালে খবর আসে তিনি নেই!” রেখে গেছেন দুই পুত্র, স্ত্রী, ভাই ও বৃদ্ধ বাবাকে। এমনিতেই ডেবরা এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সুস্থ হচ্ছেন অনেকেই কিন্তু এমন দুজন মানুষকে পরপর হারিয়ে শোকের ছায়া এলাকায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular