Homeএখন খবরসেই কোভিড হাসপাতালেই বিধ্বংসী আগুন! পুড়ে মৃত্যু ১৩ করোনা রোগীর

সেই কোভিড হাসপাতালেই বিধ্বংসী আগুন! পুড়ে মৃত্যু ১৩ করোনা রোগীর

অশ্লেষা চৌধুরী: মহারাষ্ট্রের পালঘরে কোভিড হাসপাতালে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড, ঝলসে মৃত্যু ১৩ জন করোনা রোগীর। বিরার পশ্চিমে বিজয় বল্লভ হাসপাতালের আইসিইউ-তে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকলের ১০ টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে সূত্রের খবর, শর্ট সার্কিটের কারণেই আইসিইউ-তে আগুন ধরে যায়, যার ফল হয় এমন মারাত্মক।

জানা যায় বৃহস্পতিবার ভোর তিনটে নাগাদ হাসপাতালের আইসিইউতে আগুন লেগে যায়। ভাসাই বিরার পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনায় ১৩ কোভিড আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। আহত রোগীদের দ্রুত অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চার তলার এই হাসপাতালের দুই তলায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে বিজয় বল্লভ হাসপাতালের সিইও দিলীপ শাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৯০ জন রোগী দুর্ঘটনার সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

জেলা বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রধান বিবেকানন্দ কদম জানিয়েছেন যে, আইসিইউ-র এসি ইউনিটে বিস্ফোরনের পরই আগুন ধরে যায়। ভাসাই বিরার পুরসভার দমকল বিভাগ এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু রোগীদের আত্মীয়দের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই আগুন। যাদের গাফিলতিতে এই বিপর্যয়, তাদের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিজয় বল্লভ কোভিড কেয়ার হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেছেন, এটা খুবই বড়সড় দুর্ঘটনা। দোষীরা রেহাই পাবে না। মৃতদের পরিজনদের পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মৃত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘পালঘরের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সত্যিই খুব দুঃখজনক ও মর্মান্তিক।‘ মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার আর্থিক অনুদানের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী অভিনাশ পাতিল ভয়ঙ্কর এই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমার কাছে ভোর ৩ টা নাগাদ ফোন আসে এক বন্ধুর, যার শাশুড়ি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যখন আমি পৌঁছাই, আমি দেখি দমকলের ইঞ্জিন সেখানে উপস্থিত রয়েছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় ফ্লোরে থাকা এইসিইউ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। সেই সময় সেখানে ২ জন নার্স ছাড়া আর কোনও চিকিৎসককে দেখতে পাইনি। কমপক্ষে আধ ঘণ্টা ধরে দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন, আমরা সেখানে ৮ থেকে ১০ টা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি সেইসময়।“

তবে চিকিৎসক উপস্থিত না থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দিলীপ শাহ জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন সেসময় এবং এখানকার অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলিও সঠিক ভাবে কাজ করে।

একে তো করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ মহারাষ্ট্রে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, রাজ্য জুড়ে অক্সিজেন সঙ্কট। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৬৭ হাজার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। তাঁরই মাঝে এমন ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড সকলের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবারেই মহারাষ্ট্রের নাসিকের একটি হাসপাতালের বাইরে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার লিক হয়ে ২৪ জন করোনা রোগী প্রাণ হারান। প্রায় ৩০ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ থাকায় দম আটকে তাদের মৃত্যু হয়। ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ট্যুইট করে এটিকে ‘হৃদয় বিদারক’ ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেন। এছাড়াও মহারাষ্ট্রের গত মাসে মুম্বাইয়ের ভাণ্ডুপে কোভিড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে কমপক্ষে ১০ টি দেহ উদ্ধার করা হয় আগুন নেভার পর। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছিলেন, মৃত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular