Homeএখন খবরনিজের দেহে করোনা ভ্যাকসিন নিতে চললেন প্রথম বাঙালি দুর্গাপুরের চিরঞ্জিত, জিনিস পত্র...

নিজের দেহে করোনা ভ্যাকসিন নিতে চললেন প্রথম বাঙালি দুর্গাপুরের চিরঞ্জিত, জিনিস পত্র গুছিয়ে দিলেন মা

ওয়েব ডেস্ক : ইতিহাসে নাম লেখাতে চললেন বাঙালির ছেলে চিরঞ্জিত ধীবর। মানব দেহে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ সফল হলে বাঁচবে সারা মানব জাতি আর বিফল হলে মারা যেতে পারেন তিনি। ৭ জুলাই থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল। ফলে ট্রায়ালের জন্য বেশ কয়েকজন ভলেন্টিয়ারের প্রয়োজন। প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও দুমাস আগে ভারতীয় করোনা প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন দূর্গাপুরের চিরঞ্জিত ধীবর। মঙ্গলবার তার আবেদনে সারা দিয়ে আইসিএমআর এর তরফে মনোনীত হন দুর্গাপুরের শিক্ষক চিরঞ্জিৎবাবু। ট্রায়ালের জন্য আগামী সপ্তাহেই ভুবনেশ্বর রওনা হতে হবে তাকে। বাংলায় তিনিই প্রথম ব্যক্তি যার শরীরে করোনার কোভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে চিরঞ্জিতের এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

ট্রায়াল সফল না হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে, রয়েছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও। তবুও দেশের মানুষের কাছে করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন দ্রুত পৌঁছে দিতে নিজের ইচ্ছাতেই হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিতে চান দুর্গাপুরের স্কুলশিক্ষক চিরঞ্জিৎ ধীবর। গত ২৭ এপ্রিল নিজেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চে ই-মেল পাঠিয়ে ভলেন্টিয়ার হওয়ার আবেদন জানান। মঙ্গলবার তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে আইসিএমআর এর তরফে চিরঞ্জিতকে মনোনিত করা হয়েছে৷ প্রাণের ঝুঁকি থাকায় প্রথম অবস্থায় ছেলের এই সিদ্ধান্তে বেশ ভয়ে ছিলেন তাঁর মা-বাবা। কিন্তু ভয় কাটিয়ে দেশের মানুষের স্বার্থে চিরঞ্জিতের পাশে তার পরিবার। চিরঞ্জিতের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কাঁকসার মানিকারা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকমহল।

জিনিস পত্র গুছিয়ে দিচ্ছেন মা

গত কয়েকমাসে বিশ্বের বহু দেশই সম্ভাব্য করোনা ভ্যাকসিন তৈরির দাবি করেছিল। প্রত্যেকটিই প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় ছাড়পত্র পেলেও হিউম্যান ট্রায়ালে গিয়েই বাতিল হয়ে যায়। এবার আইসিএমআর-এর সঙ্গে মিলে দেশেই করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি করছে হায়দরাবাদের সংস্থা ‘ভারত বায়োটেক’। ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান ভলেন্টিয়ার। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে চিরঞ্জিতের মতো অনেকেই ভলেন্টিয়ার হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে এবার বাংলার চিরঞ্জিত ধীবরের নাম যুক্ত হল। যদি সেই করোনা যোদ্ধাদের তালিকায় এবার নাম উঠল দুর্গাপুরের চিরঞ্জিৎ ধীবরের। কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল সফল হয় তবে করোনা যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের চিরঞ্জিতের নাম উঠবে।

কোভ্যাকসিন প্রয়োগের পদ্ধতি যা জানা গিয়েছে তা হল, প্রথমে কিছু মেডিক্যাল পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই শরীরে প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। সমস্ত নিয়ম মেনে ট্রায়ালে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। গত দুদিন আগে আইসিএমআর-এর বিজ্ঞানী ড. সমীরণ পান্ডা চিরঞ্জিতকে ফোনে এই খবর জানিয়েছেন। ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন জেনে স্বাভাবিকভাবেই খুব খুশি চিরঞ্জিত৷ তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতও থাকতেও বলা হয়েছে৷ এই ট্রায়ালের সময়ে মোট ৬ দিন যেতে হবে হাসপাতালে।

আইসিএমআর-এর তরফে ফোন পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি চিরঞ্জিত ও তাঁর পরিবার। তিনি স্থির করেই নিয়েছেন, যদি কোনো কারণে ওড়িশায় যেতে সমস্যা হয় তবে প্রয়োজনে নিজের বাইক নিয়েই তিনি ওড়িশার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন বলেই জানিয়েছেন চিরঞ্জিত ধীবর। তিনি বলেন, “দেশ ও মানবসেবার ইচ্ছা ছিল বহুদিন। কিন্তু সেই সুযোগ অবশেষে এল। সবাই এই সম্মান পান না। আমার সামনে সেই সুযোগ এসেছে। আমি নিশ্চিত, শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি দেশের মানুষকে করোনা থেকে মুক্তির পথ বাতলে দিতে ওই ভ্যাকসিনও ধারণ করতে পারব। দেশবাসীর শুভেচ্ছা ও আর্শীবাদ রয়েছে আমার সঙ্গে।”

প্রথমদিকে ছেলের এই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না মা প্রতিমা দেবী। এই বিষয়ে যথেষ্ট আপত্তিও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন আর নেই। তিনি জানান, “ছেলে দেশ মায়ের সেবায় যাচ্ছে। দেশ ও মানব সেবায় সমর্পণ করেছে নিজেকে। এখন গর্ব হচ্ছে আমার। সমগ্র দেশবাসীর আশীর্বাদ ওর সঙ্গে রয়েছে। ও সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরবে। দেশের মঙ্গল করলে ছেলেরও মঙ্গল হবে।” কে বলে সেনা কেবল সীমান্তেই লড়াই করে?

RELATED ARTICLES

Most Popular