Homeএখন খবর“সার্কুলার নয় আমরা কমিশনের কাছে পদক্ষেপ চাইছি, প্রয়োজনে আমরা টি এন শেসনের...

“সার্কুলার নয় আমরা কমিশনের কাছে পদক্ষেপ চাইছি, প্রয়োজনে আমরা টি এন শেসনের কাজ করব,” নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তা হাইকোর্টের

নিউজ ডেস্ক: “সব রকম ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না! একটা সার্কুলার জারি করে জনগণের ওপর সব ছেড়ে রেখেছেন,” কোভিড পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার সামলাতে ব্যর্থ কমিশনের ভূমিকায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিশনকে তুলোধনা কলকাতা হাইকোর্টের।

করোনা আবহে নির্বাচনী প্রচার বন্ধের মামলায় কমিশনের ভূমিকায় চুড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, “সার্কুলার নয় আমরা কমিশনের কাছে পদক্ষেপ চাইছি। আমরা অর্ডার দিতে পারছি না কারণ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি কোর্টে নেই। প্রয়োজনে আমরা টি এন শেসনের কাজ করব।”

কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির আরও বক্তব্য, কমিশনের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এর কোনও ব্যবহার করছে না কমিশন। এই করোনা কালে টি এন শেসনের দশ ভাগের একভাগ করে দেখাক কমিশন। একটা সার্কুলার দিয়ে জনগণের ওপর সব ছেড়ে রেখেছে কমিশন। পুলিশ, ক্যুইক রেসপন্স টিম সব আপনাদের আছে। ‘তাও কেন সেসবের ব্যবহার করছেন না?’

সারা দেশের পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এরই মধ্যে বঙ্গে নির্বাচনী প্রচার করোনা সংক্রমণে বিশেষ মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়ে হাইকোর্টে তনটে জনস্বার্থ মামলাও হয়। তার একটির রায়ও দেয় আদালত। যেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক সমাবেশে বা যে কোনও জমায়েতে কোভিড গাইডলাইন মানা হচ্ছে কিনা সুনিশ্চিত করতে হবে। একসঙ্গে বেশি ভিড় যাতে না হয়, নজরে রাখতে হবে। নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত রাজনৈতিক নেতাদের মাস্ক পরতে হবে। কর্মীদেরও মাস্ক পরতে জোর দিতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের। আর এই সকল বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে মুখ্য় নির্বাচনী আধিকারিক ও রাজ্যের জেলাশাসকদের।

হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরেই শুক্রবার তড়িঘড়ি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে কমিশন। এই বৈঠকে রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যসচিব এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে পাঠানো হয়। এদিন দুপুর ২ টোয় বৈঠক সম্পন্ন হয়। আর তারপরেই একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করে কমিশন। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়, বাকি সব দফায় ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হবে। পাশাপাশি কাটছাট করা হয়েছে প্রচারের সময়সূচিতেও। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত কোনও প্রচার করা যাবে না বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে। এই নিয়ম চালু হচ্ছে শুক্রবার থেকেই। তারকা প্রার্থী সহ সকল প্রার্থীকেই মাস্ক পড়া ও কোভিড বিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যেসব রাজনৈতিক সমাবেশে কোভিড বিধি মানা হচ্ছে না বা কেউ মাস্ক পরছেন না, সেগুলির দিকে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকেই নজর দিতে হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি এই সমস্ত বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার, জেলা নির্বাচন আধিকারিককেও নজরদারী চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু এত কিছুর পরেও করোনা সংক্রমণে হ্রাস হওয়া তো দূরের কথা, উল্টে সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০,৭৮৪ । গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মোট করোনায় বলি হয়েছেন ৫৮ জন। এমন পরিস্থিতিতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হাইকোর্ট, এর আগে মঙ্গলবারও করোনা সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে যথেষ্ট জনসভা, মিছিল, র‍্যালি হয়েছে। এবার মানুষকেই বিচার করতে দিন। মঙ্গলবার, প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, করোনা বিধি মেনে সুষ্ঠুভাবে ভোট করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কমিশনের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে। চাইলে, সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভোট করা যেতে পারে। সে ব্যাপারে যা সাহায্য দরকার, তা নিক কমিশন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে রাজ্য সরকার।

এরই প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানান, যেহেতু নির্বাচনী আচরণ বিধি কার্যকরী হয়ে গেছে, তাই রাজ্য সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। পুরোটাই এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এরই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, কেন রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে না, বৃহস্পতিবার ব্যাখ্যা করে তা জানাতে হবে আদালতকে। আর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েই এদিন চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। আর হাইকোর্টের এই অসন্তোষ প্রকাশের মাঝেই নড়েচড়ে বসেছে কমিশনও। প্রচারের সময় কোভিড বিধি ভঙ্গ করলে মহামারী ও বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হল কমিশনের পক্ষ থেকে।

RELATED ARTICLES

Most Popular