Homeএখন খবরবাঁকুড়ার শুশুনিয়ার পর এবার ওড়িশা সিমলিপাল; জাতীয় বনভূমি দাউদাউ করে জ্বলছে গত...

বাঁকুড়ার শুশুনিয়ার পর এবার ওড়িশা সিমলিপাল; জাতীয় বনভূমি দাউদাউ করে জ্বলছে গত ১০ দিন ধরে, কেউ কী শুনছেন?

নিউজ ডেস্ক: ওড়িশার সিমলিপাল জাতীয় বনভূমি গত ১০ দিন ধরে জ্বলছে। ২১টি ফরেস্ট রেঞ্জের ৮টিতে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। তবে সরকারি বয়ান অনুযায়ী, কোনও প্রাণহানি না ঘটলেও আগুন ক্রমশ ব্যাঘ্র প্রকল্পের কাছাকাছি পৌঁছনোতে কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।

সিমলিপালের বনাঞ্চল দেশের বৃহত্তম শাল গাছের এলাকা বলে পরিচিত। শালের বীজ, মহুয়া ফুল অরণ্যভূমি থেকে তোলার জন্য স্থানীয় মানুষরা জঙ্গলের জমি পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে এই সময় শুকনো পাতা জ্বালান। পাশাপাশি বসন্তের শুরু থেকেই তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। ফলে সেই আগুন এক বার গাছে লেগে গেলে তা দ্রুত ছড়িয়ে প়ড়ে। এ বারও তেমন ঘটনা থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনুমান।

এখানে অর্কিডের ৯৪ রকমের প্রজাতি, ৫৫ রকমের স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখির ৩০৪ রকমের প্রজাতি-সহ বিভিন্ন প্রজাতির সরিসৃপ, উভচর প্রাণী এবং নানা রকমের প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়। যে ভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে গাছপালা তো বটেই, তার সঙ্গে এই বিপুল পরিমাণ বন্যপ্রাণীর জীবনও এখন সঙ্কটে।

এই অগ্নিকাণ্ড চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশে। ওড়িশার বন দফতরের আধিকারিকদের দাবী, “সিমলিপাল জৈব বনাঞ্চল ইউনেস্কোর হাতে গোনা কয়েকটি বনাঞ্চলের মধ্যে পড়ে। এমন অরণ্যভূমি দেশে খুব কম রয়েছে। নাসার উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে বনাঞ্চলের ১০০টিরও বেশি জায়গায় আগুন ছড়ানোর খবর পাওয়া গিয়েছে।” সিমলিপাল বনাঞ্চলের ১০০টি জায়গায় আগুন লাগার ছবি উপগ্রহের মাধ্যমে নাসার ‘স্পেকট্রোরেডিওমিটার’ সম্বলিত ‘টেরা’ ও ‘অ্যাকোয়া’ নামে দু’টি উপগ্রহের ছবিতে ধরা পড়েছে। নাসার সূত্র বলছে, এই আগুন বনভূমির ৫৫৬৯ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ডিরেক্টর জগন্যদত্ত পতি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনও বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়নি। তবে বেশ কিছু জায়গায় আগুন লেগেছিল। সেখানে আমাদের ১২০০ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করছেন।’’

যদিও বন দফতরের এই দাবী মানতে নারাজ স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও গ্রামবাসীরা। পরিবেশ কর্মী ভানুমিত্র আচার্য বলছেন, ‘‘সরকারি আধিকারিকরা যদিও বলছেন কোনও বন্যপ্রাণী মারা যায়নি। কিন্তু এখানে প্যাঙ্গোলিন–সহ অনেক জীবজন্তু রয়েছে। যে ভাবে আগুন ছড়িয়েছে, তাতে তারা মারা যেতে পারে।’’

প্রসঙ্গত, এদিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে শুশুনিয়া, জ্বলছে পলাশ রাঙা বরন্তি! চলতি মাসের শুরুর দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দাউ দাউ আগুনের কবলে পুরুলিয়ার বলরামপুর, আড়শা, কোটশিলা, ঝালদা, অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি রেঞ্জের অযোধ্যা পাহাড় থেকে মাঠা, কংসাবতী-দক্ষিণ বন বিভাগের বন্দোয়ানের লোটো ঝরনা, নান্না। এ আগুন নেভানো অসম্ভব কারন বনকর্মীদের কাছে আগুন নেভানোর মত কোনও সরঞ্জাম নেই। দু’দশটা দমকলের ইঞ্জিন এ আগুন নেভাতে পারবে না। হয়ত দক্ষিণ বঙ্গের সমস্ত ইঞ্জিন এনেও এ আগুন নেভানো যাবে না। জ্বলছে হাজার হাজার হেক্টর। কাঁচা গাছের ডালপালা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে নাজেহাল বনকর্মীরা। এ পাশে নেভালে ওপাশে জ্বলে ওঠে।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুশুনিয়া পাহাড়ে বিধ্বংসী আগুন লেগে আসছে। গত এপ্রিলেও শুশুনিয়া পাহাড়ের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে আগুন লেগেছিল। ফের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আগুন লেগেছে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে। আগুনের তাপে জঙ্গলের অনেক মূল্যবান গাছপালা ঝলসে যাচ্ছে। এমনকি সাপ, খরগোশ ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণী শুশুনিয়া পাহাড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে।

RELATED ARTICLES

Most Popular