Homeএখন খবরনদীর বালি হজম হয়, মুড়ির বালি নয়! দু'মুঠো বালির জন্য গ্রাম ছাড়া...

নদীর বালি হজম হয়, মুড়ির বালি নয়! দু’মুঠো বালির জন্য গ্রাম ছাড়া মহিলা, প্রহৃত সাংবাদিক

নিজস্ব সংবাদদাতা: সামান্য বালি! মুড়ি ভাজার আবশ্যিক উপকরন। গ্রামে যাঁরা মুড়ি ভাজেন সেই মহিলারা এবং ঘর সমেত যাঁরা মুড়ি খান তাঁরা জানেন ওই বালির মহিমা। খান সবাই তবে বালি যোগাড়ের দায়টা মহিলাদের। গ্রামে গঞ্জে তেমন মোটা স্বচ্ছ বালি সহজে মেলেনা। গ্রামের স্কুলের নির্মাণ কাজের জন্য বালি ফেলা হয়েছিল। আর সেখান থেকে কয়েক মুঠো বালি নিয়েছিলেন এক মহিলা। নিয়েছিলেন সবার সামনেই, যেমনটা হয়ত আরও আরও কেউ কেউ নিয়েছিলেন আর তাতেই সাত খুনের অপরাধ যেন। লকডাউনের মধ্যেই সালিশি সভা বসিয়ে গ্রাম ছাড়া করা হল মহিলাকে। আর তা করলেন শাসকদলের নেতারাই, সারা রাজ্য জুড়ে সমস্ত নদীর বালি হজম করে দেওয়ার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে বেশি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের কাশীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পারিজাতপুর গ্রামের এই ঘটনায় অভিযোগের তির স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ও বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে।
জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়নগড় ব্লকের পারিজাতপুর গ্রামের ঐ মহিলার পুষ্পা রাউত। মহিলার অভিযোগ, ‘গ্রামের স্কুলের সামনে বালি মজুত করে রাখাছিল। সেখান থেকে মুড়ি ভাজার জন্য বালতিতে করে কিছুটা বালি নিয়ে এসেছিলাম। সেটা অনেকেই দেখেছে। একটু বালি নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন দত্ত এবং বুথ সভাপতি মানিক মহাপাত্র’র নেতৃত্বে গ্রামে সালিশি সভা বসিয়ে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে গ্রাম ছেড়ে দেওয়ার নিদান দেয়। পুস্প বলেন, টেনে হিঁচড়ে বসিয়ে জোর করে আমাকে সাদা কাগজে সই করিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে। লকডাউনের সময় এখানে ওখানে চার দিন ঘুরে বেড়িয়েছি। ঘটনার সময় আমার ছেলে বাড়িতে ছিলনা। ছেলে দুধ বিক্রি করতে গিয়েছিল’।
পুষ্প রাউতের ছেলে চন্দন রাউত বলেন, এই ঘটনা জানার পর আমি পুলিশকে বিষয়টি জানাই। খুঁজতে খুঁজতে এক আত্মীয় বাড়িয়ে মাকে পাই। তিনি বলেন, আমার বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করায়, আমার ন’মাস বয়স থেকে বাবা মাকে মামা বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। সেই থেকে আমরা এই গ্রামে আছি।”
এই খবর পাওয়ার পর স্থানীয় একটি সংবাদ চ্যানেলের সাংবাদিক খবর সংগ্রহ করতে গেলে তাঁকে রীতিমত হেনস্থা ও মারধর করা হয়। পরিচয় পত্র দেখানোর পরেও গ্রামে এবং গ্রামের বাইরে মোট দু’দফায় নিগ্রহ করা হয় তাঁকে। দুটি ঘটনারই অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়।
ঘটনার নিন্দা করেছেন তৃণমূল পরিচালিত কাশীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রবীন্দ্রনাথ ধাউড়্যা। তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা শোনার পর আমি খোঁজ নিয়েছি। পঞ্চায়েত প্রধান রবীন্দ্রনাথ ধাউড়্যা বলেন, মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ যাই থাকুক, এভাবে সালিশি সভা বসিয়ে গ্রাম ছাড়া করা ঠিক হয়নি। এই ঘটনা কোন ভাবেই সমর্থন করা যায়না। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোন যোগ নেই। তিনি বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় শনিবার সন্ধ্যায় ঐ মহিলাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে হয়েছে।” অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন দত্ত বলেন, ‘যা করেছেন গ্রামের মানুষ করেছেন। আর কেউ ওকে জোর করে কাগজে সই করায়নি। নিজেই চুরির কথা স্বীকার করে লিখে দিয়েছে। নিজেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে’। এটা ঘটনা যে পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহন করে এবং বিষয়টি জানার জন্য উভয়পক্ষকেই থানায় ডেকে পাঠানো হয় । মহিলা ও তাঁর ছেলে থানায় গেলেও অভিযুক্তরা যথারীতি থানাকে উপেক্ষা করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন।
তৃণমূল নেতাদের কাছাকাছি থাকা কিছু গ্রামবাসী আবার মহিলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন মহিলাকে হেয় করার জন্য যা খুবই সহজ ও প্রচলিত উপায়। তবে ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। মাইতি বলেছেন , ” কোনও অবস্থাতেই একজন মহিলার ওপর এই আচরন বরদাস্ত করা হবেনা। আমাদের মাথার ওপরে রয়েছেন একজন মহিলা। যাঁকে আমরা দেবীর চোখে দেখি সেই মমতা ব্যানার্জীর রাজ্যে কোনও মহিলাকে অসম্মান সহ্য করা হবেনা। সহ্য করা হবেনা সাংবাদিক নিগ্রহ। আমি স্থানীয় ব্লক নেতৃত্বকে বলেছি উপযুক্ত ব্যবস্থা সহ আমাকে রিপোর্ট করতে।” এখন দেখার বালির জল বা জলের বালি কোন দিকে গড়ায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular