Homeএখন খবরমারণ ভাইরাসে কাছে হেরে চলে গেলেন দেশের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম চিকিৎসক, শোকের ছায়া...

মারণ ভাইরাসে কাছে হেরে চলে গেলেন দেশের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম চিকিৎসক, শোকের ছায়া রাজ্য চিকিৎসকমহলে

ওয়েব ডেস্ক : করোনা মোকাবিলায় মানুষকে সুস্থ করে তুলতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন বহু চিকিৎসক। এদের মধ্যে অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, তবে সেরেও উঠেছেন অনেকে। কিন্তু এই প্রথম মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারণ ভাইরাসের কাছে হেরে গেলেন কলকাতার তরুণ কার্ডিয়াক সার্জন। এর আগেও বহু চিকিৎসক করোনার বলি হয়েছেন। তবে প্রত্যেকেরই বয়স চল্লিশ ছুঁয়েছে। কিন্তু সদ্য তিরিশ এর কাঁটা অতিক্রম করা ডা. নীতীশ কুমারই দেশের সর্বকনিষ্ঠ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজ্যের চিকিৎসকরা। হাসপাতালে সদ্য যোগ দেওয়া তরুণ চিকিৎসকের মৃত্যুতে আরএন টেগোর হাসপাতাল জানিয়েছে, “আমাদের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবে নীতীশ।” করোনা যোদ্ধা ডা. নীতিশ কুমারের মৃত্যুতে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে তাকে ‘করোনা শহিদ’ সম্মান জানানোর দাবি রেখেছে। এবিষয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে লিখিত চিঠি পাঠিয়ে আবেদনও জানানো হয়েছে।

বিহারের এই তরুণ চিকিৎসক ৭ বছর আগে ডাক্তারি পড়তে কলকাতায় আসেন। কার্ডিয়াক সার্জারিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছেন আরএন টেগোর হাসপাতালে। টানা ছ’বছরের পড়াশোনা শেষ করার পর নিজের কলেজ আরএন টেগোরেই কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ডা. নীতিশ। চলতি বছর জুন মাসে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই তিনি ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। এরপর সপ্তাহখানেকের জন্য বিহারে নিজের বাড়িতে যান। সেসময় পরিবারের লোকেরা করোনা পরিস্থিতির আপাতত কলকাতায় ফিরতে না করেছিলেন। কিন্তু এই মহামারি পরিস্থিতিতে কাজ ফেলে বাড়িতে থাকতে মন সায় না দেওয়ায় সাতদিনের মধ্যে কলকাতায় ফিরে এসেই কাজে যোগ দিয়েছিলেন ডা. নীতিশ। হাসপাতালের আউটডোরে উপসর্গহীন নানা রোগী দেখতে দেখতেই গত মাসে আচমকা তিনিও করোনায় আক্রান্ত হন। পরীক্ষা করালে কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপরই ধীরে ধীরে ক্রমশ শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকে চিকিৎসক। এমনকি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও কমতে থাকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই মাসের প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্ত হন ওই চিকিৎসক। এরপর প্রায় ২৫ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন প্রয়াত চিকিৎসক। তবে জানা গিয়েছে, চিকিৎসা শুরু হলেও তরুণ চিকিৎসক চিকিৎসায় খুব একটা সাড়া দিচ্ছিলেন না। এর জেরে গত কয়েক দিন ধরে দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করেছিল। এমনকি দীর্ঘদিন তাকে ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়েছিল। এরপর জুলাইয়ের শেষে মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকের ফুসফুস একেবারেই অকেজো হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে কৃত্রিমভাবে ফুসফুসকে কাজ করানোর জন্য এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন বা ইকমো মেশিনের সাপোর্টও দেওয়া হয় তাঁকে। শুধু তাই নয়, এই মূহুর্তে সমস্ত রোগীর শরীরেই সুস্থ ব্যক্তির প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো নীতিশের শরীরে সুস্থ ব্যক্তির প্লাজমাও দেওয়া হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল প্লেটলেট। কিন্তু তবুও শেষরক্ষা আর হল না।

দীঘ ৩০ দিনের চেষ্টার পর অবশেষে মঙ্গলবার আরএন টেগোর হাসপাতালে ডা. নীতিশ কুমারের মৃত্যু হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। করোনা ভাইরাসের জেরে শরীরের একাধিক অঙ্গ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাল্টি অর্গান ফেলিওরকেই দায়ী করছেন সহ-চিকিৎসকরা। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, সবসময় হাসিমুখে থাকা নীতীশ কুমার আদতে খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন চিকিৎসকও ছিলেন। মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই দক্ষ কার্ডিয়াক সার্জেন হয়ে উঠছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে নীতিশের দেশের বাড়ি অর্থাৎ বিহারে তাঁর স্ত্রী ও দু’বছরের ছেলে রয়েছে। সহকর্মীর মৃত্যুতে তাঁদের প্রতিও সহানুভূতি জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

RELATED ARTICLES

Most Popular