Homeএখন খবরসংঘাত চরমে! নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর পাল্টা জোড়া সভার ডাক দিল দল, নন্দীগ্রামের মাটিতেই...

সংঘাত চরমে! নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর পাল্টা জোড়া সভার ডাক দিল দল, নন্দীগ্রামের মাটিতেই ভাঙনের মুখে কী তৃণমূল

মমতার ছবি দিয়েও রক্ষা হলনা

নিত্য গুপ্ত : যা হওয়ার ছিল তাই হল অবশেষে এবং তা শুরু হল নন্দীগ্রাম থেকেই। ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করে এবার ময়দানে নেমেই পড়ল তৃনমূল আগামী মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি তথা শুভেন্দু অধিকারীর ডাকে বিশাল জনসভার আহ্বান করা হয়েছে। এই সভার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে নন্দীগ্রামের গোকুল নগরের মাঠকে। সেই সভাকে ঘিরে যখন সারা রাজ্য জুড়ে শুভেন্দু অনুগামীদের উত্তেজনা তুঙ্গে ঠিক তারই ২৪ ঘন্টা আগে সেই নন্দীগ্রামে জোড়া সভার ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। নন্দীগ্রামের হাজরাকাটা এবং চৌরঙ্গীতে সকালে এবং বিকালে এই দুটি সভারই প্রধানবক্তা হিসাবে হাজির থাকছেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যে ফিরাদ হাকিমকেই শুভেন্দু বধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বর্তমান রাজনৈতিক সমালোচকদের অভিমত।

নন্দীগ্রাম জুড়ে পাল্টা পোষ্টারড

স্বাভাবিক ভাবেই এই দুই শিবিরের সভাকে কেন্দ্র করে তীব্র দ্বিধা আর বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃনমুল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে। সোমবার দুপুর থেকে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর আহুত সভার পোষ্টারের পাশেই পড়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সভার পোষ্টার! আর সব মিলিয়ে সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে নন্দীগ্রামের তৃনমূল কর্মী সমর্থকরা। নন্দীগ্রাম জুড়ে হাটে বাজারে রাস্তা ঘাটে অলিতে গলিতে সভা শুরুর ১২ঘন্টা শুধু একটাই আলোচনা, কোন সভায় যাব?

উল্লেখ্য প্রতিবছরের মতই ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে শহিদ সভা করার ডাক দেওয়া হয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী গোকুলনগর হাইস্কুল ময়দানে জনসভার ডাক দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল দশটায় নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের করপল্লিতে শহিদ বেদিতে শুভেন্দু মাল্যদান করবেন। তারপর সেখান থেকে সোজা তেখালি বাজার সংলগ্ন গোকুলনগর হাইস্কুল ময়দানে জনসভায় যোগদান করবেন। এবার অবশ্য নতুন মাত্রা পেয়েছে নন্দীগ্রামের এই কর্মসূচি। কারন এবারের সভায় শুধুই নন্দীগ্রাম বা পূর্ব মেদিনীপুর নয়, জানা গেছে সমগ্র দক্ষিনবঙ্গ থেকেই শুভেন্দু অনুগামীরা এই সভায় আসছে। ‘আমরা দাদার অনুগামী’র পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে এই সভায় যাওয়ার জন্য। দুই মেদিনীপুর তো রয়েছেই পাশাপাশি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া থেকেও মানুষ জন যাওয়ার কথা।

গত কয়েক মাস ধরেই শুভেন্দু এড়িয়ে চলেছেন বেশ কিছু সরকারি সভা, দলীয় কর্মসূচি। নিজস্ব উদ্যোগে হাজির হচ্ছিলেন বিভিন্ন ক্লাব, বেসরকারি সভা সমিতিতে। সংঘাত ক্রমশই তীব্র হচ্ছিল। সংঘাতের চোরা স্রোত বইছিল শুভেন্দু অধিকারী সমর্থক বনাম শুভেন্দু বিরোধীদের মধ্যে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি উত্তরবঙ্গে শুভেন্দু সমর্থকরা শুভেন্দুর ছবি সম্মিলিত ফ্লেক্স ব্যানার টাঙাতে শুরু করেন। এরপর ধিরে কিন্তু পরিকল্পিত ভাবে রাস্তায় নামে বিরোধীরা। শুভেন্দুর অনুগামীদের পাল্টা মিছিল দেখা যায় অভিষেক ব্যানার্জীর ছবি বুকে। কোথাও কোথাও ছিঁড়তে শুরু করা হয় শুভেন্দুর ব্যানার। নাম না করেই শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমন করেন ফিরহাদ হাকিম। পাল্টা এবং তার পাল্টা চলতে থাকে কিন্তু তখনও প্রকাশ্যে আসেনি সংঘাত যা চলে এল সোমবার, সভার ঠিক কয়েক ঘন্টা আগে।

ঘটনা চক্রে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল সভাপতি শুভেন্দু পিতা সাংসদ শিশির অধিকারীর কাছে চলে আসে রাজ্যের নির্দেশ। সেই নির্দেশ অনুযায়ী তিনি বলেন,’ দলীয়ভাবে মঙ্গলবার বিকেলে দুটো সভা হবে। হাজরকাটা এবং চৌরঙ্গিতে অনুষ্ঠিত হবে সভা। এবার ভূমি উচ্ছেদ কমিটি আলাদা ভাবেই শহিদ দিবস উদযাপন করছে। সে কারণেই দলীয়ভাবে পৃথক শহিদ সভার আয়োজন করা হয়েছে।’ তৃণমূলের শহিদ সভায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সহ গুচ্ছ নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শরীর টানলে বিকেলের সভায় উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন শিশিরবাবুও।

সংঘাত যে নন্দীগ্রামের সভা ঘিরেই হতে পারে তার আন্দাজ শুভেন্দু অধিকারী করেছিলেন আর তাই সংঘাত কিছুটা এড়ানোর কৌশল নিয়ে অনেকদিন বাদে নন্দীগ্রামের ওই সভার ব্যানারে দেওয়া হয়েছিল মমতা ব্যানার্জীর ছবিও কিন্তু ভবি তাতে ভোলার নয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃনমুল সহসভাপতি চূড়ান্ত অধিকারী পরিবার বিরোধী অখিল গিরি আগেই ঘোষণা করেছিলেন, “ওই সভা দলীয় সভা নয় তাই নেত্রীর ছবি দিলেও তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা ওই সভায় যাবেনা।” বাস্তবিকই হল তাই নন্দীগ্রাম কাণ্ডের মাত্র ১৩বছরের মাথায় নন্দীগ্রামের মাটিতেই আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেল তৃনমূল এবং হয়ত ভাঙনের শুরুটাও হয়ে গেল।

RELATED ARTICLES

Most Popular