Homeএখন খবরদিঘার জিরো পয়েন্টে সেলফি তুলছে পর্যটক আর ভাঙনের গ্রাউন্ড জিরোতে সর্বনাশের প্রহর...

দিঘার জিরো পয়েন্টে সেলফি তুলছে পর্যটক আর ভাঙনের গ্রাউন্ড জিরোতে সর্বনাশের প্রহর গুনছে শঙ্করপুর-চাঁদপুর-তাজপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভয়টা একটু কমেছে, তাই সৈকত সরনীর গার্ড ওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সকাল থেকেই বাবু আর বিবির এন্তার সেলফি ক্লিক। মাঝে মধ্যেই গর্জে ওঠা সমুদ্রের রুদ্র স্বরে খিল খিল করে বাবুর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে বিবি। জিও দিঘা! এই না হলে রোমাঞ্চ? ভয়ের সঙ্গে সৌন্দর্যের বিয়ার পাঁচ করে মেতে উঠেছে দিঘা। বাঁধনছাড়া মিষ্টি আনন্দে সমুদ্রের নোনা ভয়ঙ্করতা ঢুকে গিয়ে যাতে লাইফটা হেল করে দেয় তাই রাতভর সমুদ্র তট প্রহরায় দিঘা আর কোস্টাল থানার পুলিশ, বাবুর নাকি দু’পেগ পেটে পড়লেই মাঝরাতে ও সঙ্গিনীকে নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে আসার বাই চেপে যায়! তাই অগত্যা রাত জাগতে হয় পুলিশকে। না’হলেই সকাল বেলার হেড লাইনে উঠে আসতে পারে সমুদ্র দেখতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু পর্যটকের। তাই বৃহস্পতিবার ভেজা সমুদ্রের পাশেই রাত জেগেছে পুলিশ আর শুক্রবার তাই আবার সৈকত জুড়ে নিরাপদ সেলফি সফেন।

একেই বোধহয় বলে কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ!
জোড়া নিম্নচাপের সঙ্গে জুড়েছে অমাবস্যা কোটালে ফুঁসে ওঠা বঙ্গোপসাগর যখন দিঘায় সমুদ্র তটে পর্যটকদের ফেটে পড়া উল্লাস তখন কয়েক কিলোমিটার দুরেই শঙ্করপুর, চাঁদপুর ও তাজপুর উপকূলের গ্রামে গ্রামে প্রলয় নাচছে তা তাথৈ তাথৈ।
রাতভর ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পর বৃহস্পতিবার সকালে জোয়ারের সময় দিঘার মতই তীব্র জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছিল শঙ্করপুর উপকূল এলাকায়। দিঘার মতই ১৩-১৫ ফুট উচ্চতার বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে গ্রামগুলিকে ঘিরে রাখা বাঁধের ওপর। কিন্তু এখানে আনন্দের বদলে শুধুই আতঙ্ক। বৃহস্পতিবার বিকালেই প্রথমে উপচে পড়া সমুদ্র আর পরের দিকে সেই বাঁধ ভেঙে সমুদ্র ঢুকে পড়েছে। শঙ্করপুর উপকূলে সজোয়ারে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে গিয়েছে নোন জলে। এতে ব্যাপকভাবে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। পাশাপাশি মাছের ভেড়ি, পুকুরে নোনা জল ঢুকে মাছ চাষেরও বিরাট ক্ষতি হয়েছে। প্রবল সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ গত পূর্ণিমা কোটালের ক্ষয়ক্ষতির রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি গ্রামবাসীরা। অমাবস্যা কোটালের আগেই সমুদ্র বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছিল সেচ দপ্তর। বোল্ডার, পাথর ফেলে উঁচু করা হয়েছিল বিপর্যস্ত সমুদ্র বাঁধের একাংশ। কিন্তু প্রকৃতি সহায় না হওয়ায় শঙ্করপুর, জামড়া-শ্যামপুর, চাঁদপুর এলাকাগুলোতে উঁচু বাঁধ টপকেই জল ঢুকেছে লোকালয়ে। শুক্রবারও পুরোদমে চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ। কিন্তু তাতে কতটা রক্ষা হবে কে জানে?
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সেভাবে জলোচ্ছ্বাস না হলেও শুক্রবার সকাল থেকে ফের বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে সমুদ্র। বাঁধের একাধিক দুর্বল অংশের ফাটল দিয়ে নোন জল ঢুকে ফের প্লাবিত হয়েছে স্থানীয় চাঁদপুর, জলধা, জামড়া-শ্যামপুর, জলধা, তাজপুর সহ পার্শবর্তী বোধড়া, লচ্ছিমপুর, ট্যাংরামারি গ্রামগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের জমি, ঘরবাড়ি। সব মিলিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শঙ্করপুর উপকূলের মানুষজন। তবে আগের তুলনায় পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। তিনি বলেন,’শঙ্করপুর উপকূলের আতঙ্কিত মানুষজনকে প্রশাসনের তরফে আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেচ দপ্তর বাঁধ বাঁধার কাজ করছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রয়েছে আমাদের।’
এদিন সকালে শঙ্করপুর উপকূল এলাকায় পৌঁছে যান রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র, স্থানীয় তালগাছড়ি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ জানা, বিডিও বিষ্ণুপদ রায় সহ সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। বিডিও বলেন, “জল ঢুকলেও এবার অবশ্য বড়় রকমের কোনও অঘটন ঘটেনি। আমরা দুর্গত পরিবারের লোকেদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে।”

RELATED ARTICLES

Most Popular