Homeএখন খবরনির্বাচনের মুখে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনায় শুভেন্দুর চক্রান্ত দেখছে তৃণমূল 

নির্বাচনের মুখে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনায় শুভেন্দুর চক্রান্ত দেখছে তৃণমূল 

নিজস্ব সংবাদদাতা: নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সহ প্রথম সারির তৃনমূল নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশের পেছনে সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর চক্রান্ত রয়েছে বলেই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। নির্বাচনের মুখে তৃনমূলকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্যেই শুভেন্দুই নিজের দলীয় আইনজীবীকে দিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করিয়েছিলেন যার পরিপ্রেক্ষিতেই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন তৃনমূল নেতারা। উল্লেখ্য সোমবার হলদিয়া আদালতের একটি নির্দেশে ২০০৭ নন্দীগ্রামের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নন্দীগ্রামের বিধায়ক প্রার্থী তৃনমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জীর নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুপিয়ান সহ ৪৬জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পাশাপাশি তাঁদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ওই সময়ে জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা আবু তাহের বলছেন, ‘‘২০২০ সালে শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখন তিনি বিজেপিতে গিয়ে জনস্বার্থ মামলা করে তৎকালীন আন্দোলনকারীদের জেলে ভরতে চাইছেন।’’

উল্লেখ্য, গত বছর ৯ এবং ১০ জুন হলদিয়া মহকুমা আদালতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ের মোট ৯টি মামলা প্রত্যাহার করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। তার মধ্যে ৬টি মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশের আইনি বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থ মামলা করেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আইনজীবী নীলাঞ্জন অধিকারী। বাকি যে ৩টি মামলা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে কোনও জনস্বার্থ মামলা করা হয়নি, তারই একটিতে অভিযুক্ত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট মেঘনাদ পাল। ফলে, গোটা ঘটনায় শুভেন্দুর ভূমিকা রয়েছে বলে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

সোমবার হলদিয়ার অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারপতি বা এসিজেএম শেখ সুপিয়ান ছাড়াও আবু তাহের, স্বদেশ দাস অধিকারী, খোকন শিট,শ্রীকান্ত পাইক সহ একগুচ্ছ তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা কার্যকরী করার নির্দেশ দিয়েছে যাকে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে নন্দীগ্রামে। খবর পাওয়ার পর পুরো নন্দীগ্রামেই তৃনমূলের নির্বাচনী কার্যালয় গুলিতে কার্যত চূড়ান্ত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় পরবর্তী রণকৌশল নির্ধারণ করতে জোর সক্রিয়তা শুরু হয়েছে পার্টির রাজ্য স্তরে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন চলার সময় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল।যেহেতু তৃনমূল নেতারাই ওই কমিটির মাথায় ছিলেন তাই মামলা গুলিতে তাঁরাই আসামি হন। এরকমই একটি মামলা(কেস নম্বর ২৩৭, ২০০৭,নন্দীগ্রাম থানা) যা কিনা মারধর করা ইত্যাদি সংক্রান্ত। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই মামলাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করা হয়নি। শাসকদলের নেতারা অভিযুক্ত বলে পুলিশও বিষয়টি নিয়ে এগোয়নি। কার্যত ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু এবছর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সমস্যা হতে পারে মনে করে মামলাটি হঠাৎই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। আর তার বিরুদ্ধেই সম্প্রতি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী ও বিজেপির নন্দকুমারের প্রার্থী নীলাঞ্জন অধিকারী।

গত ৫ই মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি আর রাধাকৃষ্ণণ ও অরিজিৎ ব্যানার্জির ডিভিশন বেঞ্চ আগের রায় খারিজ করে নতুন করে মামলা চালু করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে ভৎর্সনা করে জানায় যে এই ধরনের অপরাধ মূলক মামলা প্রত্যাহার করে নিলে আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। মামলা ফের নিম্ন আদালত বা হলদিয়া আদালতে চালু হয়। সোমবার হলদিয়া আদালতে সেই মামলার শুনানি হয়। আদালত অভিযুক্তদের জামিন খারিজ করে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং পুলিশকে দ্রুত এই গ্রেপ্তারি কার্যকর করার নির্দেশ দেয়। এরফলে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন পুলিশ এই নির্দেশ কার্যকরি করতে বাধ্য থাকবে। কারন কমিশনের নির্দেশ রয়েছে যে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার করতে হবে। এই ধরনের মামলায় সচরাচর নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে জামিন পাওয়া মুশকিল।

তবে এই ঘটনার পেছনে শুভেন্দু অধিকারীর কোনও ভূমিকা নেই বলেই দাবি বিজেপির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল অবশ্য বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর কথায় তো আর আদালত চলে না। আদালত যা ঠিক মনে করেছে, সেই নির্দেশই দিয়েছে।’’ বিজেপি নেতাদের বক্তব্য হাইকোর্টের মত উচ্চতর আদালতের রায়কে প্রভাবিত করা যায়না।

RELATED ARTICLES

Most Popular