Homeএখন খবরকেশপুরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ব্যাপক বোমাবাজি! নিহত এক ১৪বছরের স্কুল ছাত্র...

কেশপুরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ব্যাপক বোমাবাজি! নিহত এক ১৪বছরের স্কুল ছাত্র সহ ২

নিজস্ব সংবাদদাতা: বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে এক ১৪ বছরের স্কুল ছাত্র সমেত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিশোরের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে অন্যদিকে ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন আরেক ব্যক্তিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পথে মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত কিশোরের দেহ কেশপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যদিকে  অন্য ব্যক্তির দেহ রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন নিহতরা হলেন সেক মাজাহার(১৪), সেক মহম্মদ নাসিম (৪২)। ঘটনাটিকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সঙ্ঘর্ষ বলছেন স্থানীয়রা যদিও কেশপুর তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দুই গোষ্ঠী তৃণমূলের হলেও এটি কোনও রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষ নয়, পুরো ঘটনাই জ্ঞাতি সম্পর্কের পারিবারিক বিবাদ।
জানা গেছে সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ ঘটনা ঘটেছে কেশপুর থানা থেকে সামান্য দুরত্বে দামোদরচক গ্রামে যেখানে প্রথমে বচসা থেকে দুই গোষ্ঠী পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং যথেচ্ছ ভাবে বোমাবাজি হতে থাকে। দামোদরচকের আশেপাশের ৩কিলোমিটার দুরের লোকেরাও বোমার আওয়াজ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

যদিও কেশপুরের তৃনমূল ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, “পুরো ঘটনাটি পারিবারিক। আমাদের দলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্য সেক সেলিম ও তার কাকার মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল যা কিনা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। সেই নিয়েই আজ দুটি পরিবারের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় তারই পরিনতিতে এই ঘটনা ঘটেছে। এটি পুরোপুরি বিরোধ, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
মৃত সেক নাসিমের এক ভাই সেক সেলিম পঞ্চায়েত সদস্য। মৃতের দাদা সেক তানসুরের দাবি তাঁরা কেশপুরের প্রাক্তন তৃনমূল সভাপতি সঞ্জয় পানের অনুগামী অন্য দিকে তাঁর কাকা সেক একতার ও ধলহারা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সেক বশির বর্তমান ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাঠীর অনুগামী।

তানসুর বলেন, ” কেশপুর কলেজের সামনে একটি জমি নিয়ে আমার কাকা এক তারের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা চলছে। জমিটি আমাদের হলেও জোর করে কাকা কব্জা করতে চাইছে। উত্তম ত্রিপাঠী ব্লক সভাপতি হওয়ার পর এই ঝামেলা আরও বাড়ছে কারন আমার কাকা এবং প্রধান মিলে উত্তম ত্রিপাঠীর সাহায্য নিয়ে জমির দখল নিতে চাইছে। আমরা বহুবার ব্লক সভাপতি, থানার বড়বাবু এবং বিধায়ক শিউলি সাহার দ্বারস্থ হয়েছি কিন্তু কেউই বিষয়টির মীমাংসা করেনি। করলে আজ ২টা প্রাণ চলে যেতনা।”

তানসুর আরও বলেন, ” ইদানিং কারনে অকারণে গায়ে পা দিয়ে ওরা ঝগড়া বাধাতে চাইছিল। ওদের পক্ষে পুলিশ এবং দলের সভাপতি থাকায় ওরা গায়ে পড়ে ঝগড়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছিল। গত দুদিন এই উত্তেজনা আরও চরমে উঠেছিল কারন সদ্য দল ফের উত্তমকেই সভাপতি করেছে। আর তাতেই ওরা আরও জোর পেয়ে গেছে। আজ বিকালে আমাদের একটি ছেলেকে রাস্তায় একা পেয়ে ব্যাপক মারধর করে, মাথা ফাটিয়ে দেয়। বিষয়টা নিয়ে আমার কাকার সঙ্গে কথা বলতে গেছিল আমার ভাই মাজাহার। ও রাজনীতি করেনা। এখানে থাকেনা, মুম্বাইতে বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকে। কয়েকদিন আগে বাড়ি এসেছিল। বিকালের ঘটনার পর কাকার কাছে গেছিল বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে। ও যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তখনই ওর ওপর বোমা ছোঁড়া হয়। ওর বুকে লাগে। রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যায় ও। প্রথমে কেশপুর হাসপাতাল তারপর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আনার পরই মারা যায়।”

জানা গেছে এই ঘটনার পরই দুপক্ষে ব্যাপক বোমা বাজি হয় যার মাঝখানে পড়ে মৃত্যু হয় নিরীহ ওই ক্লাশ এইটে পড়া ছাত্রের। এদিকে কেশপুর জুড়েই সঞ্জয় পান বনাম উত্তম ত্রিপাঠী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল কে সভাপতি মনোনীত হয় সেই দিকে তাকিয়ে। এই ঘটনার পর দুই গোষ্ঠীই এখন টগবগ করে ফুটছে। বড়সড় গন্ডগোলের আশঙ্কায় রাতেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সদর থেকে পুলিশের এক বিশাল বাহিনী রওনা দিয়েছে কেশপুরের দিকে।                                                             নিহত নাসিম গত দেড় দশক ধরেই স্ত্রী, ২ মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে মুম্বাইয়ে থাকত। জরির কাজ করত সে। ১৫তারিখ তার ফেরার কথা ছিল কিন্তু এই সমস্যা মেটাতেই থেকে গিয়েছিল সে। ৩০তারিখ মুম্বাই ফেরার বিমানের টিকিট কাটা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই সব শেষ!

RELATED ARTICLES

Most Popular