ওয়েব ডেস্ক : দুই আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণ এলাকারই পাঁচ যুবকের। ঘটনার পরই অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে দুই বোন। শুক্রবার রাতে এমনই এক নৃশংস ঘটনার সাক্ষী থাকলো জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ এলাকা। খুড়তুতো-জ্যেঠতুতো দুই বোন একই বাড়িতে থাকেন। খুবই দরিদ্র পরিবারের দুই বোনের এক জনের বয়স ১৫ বছর, অন্যজন সবে মাত্র ১৩র গন্ডি ছুঁয়েছে। জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে দুই বোন বিস্কুট কিনতে দোকানের যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। মাঝ রাস্তায় পথ আটকায় কয়েকজন যুবক। মাঝ রাস্তায় আচমকা ছেলেগুলির পথ আটকানোয় প্রথমে ভয় পেলেও প্রতিবাদ করেছিল ছোটোবোন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি৷ তাদের দুজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর চলে পাশবিক অত্যাচার। গণধর্ষণ করা হয় ওই দুই নাবালিকাকে।
ঘটনার পর কোনোরকমে পালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে দুই নাবালিকা৷ বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বললেও এই ঘটনার প্রভাব তাদের ওপর পড়েছিল। সেকারণে রবিবার সকাল হতেই ঘরে থাকা কীটনাশক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর ফাঁকা জায়গায় গিয়ে সেই কীটনাশক খেয়ে ফের বাড়ি ফিরে আসে তারা। বাড়ির দুই মেয়ে যে কীটনাশক খেয়েছে তা প্রথমে বাড়ির লোকও টের পায়নি। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়লে, হতবাক হয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শেষমেশ বড়ো বোনকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়না। এবিষয়ে ছোট বোন জানিয়েছেন, তারা বাড়ি ফিরে এলেও ওই ঘটনার পর তারা কিভাবে গ্রামে মুখ দেখাবেন সেই লজ্জায় তারা আর বেঁচে থাকতে চাননি। এই কারণে দু’জনেই কীটনাশক খেয়েছিলেন।
ঘটনার পর রবিবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রাণপণ বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়েছিলেন দুজনেই। কিন্তু শেষমেশ সোমবার মারা যান বড়ো মেয়ে। আপাতত ছোট বোনের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় তার কাছ থেকে ঘটনার পুরো বিবরণ জানতে পারে পরিবার। এরপরই বাপি বিশ্বাস, শিবু বিশ্বাস, চয়ণ বর্মন, মিলন বিশ্বাস ও সিলন বিশ্বাস নামে গ্রামেরই পাঁচ যুবক ও এক কিশোরের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এদিকে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই পুলিশ ওই নাবালক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এই ঘটনার বিষয়ে জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাকি অভিযুক্তরাও দ্রুত ধরা পড়বে বলে আশা করছি আমরা।”
হাসপাতালের বেডে শুয়েই শনিবার রাতের পুরো ঘটনা পরিবারকে জানায় ওই নাবালিকা৷ নাবালিকার দাদা সেই বয়ানের ভিডিও রেকর্ডও করে। এরপর সেই ভিডিও জমা দেওয়া হয় থানায়। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, রীতিমতো কান্নাকাটি করছে ওই নাবালিকা৷ সে বলছে, “রাস্তা থেকে আমাদের জোর করে তুলে নিয়ে যায় বাপি বিশ্বাস, শিবু বিশ্বাস, চয়ণ বর্মন, মিলন বিশ্বাস ও সিলন বিশ্বাস। আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। জোর করে যৌন অত্যাচার চালাতে থাকে। আমার দিদিকে জোর করে বাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। আমি তো আমাকে বাঁচাতে পারি, কিন্তু দিদিকে বাঁচাতে পারিনি। সকলের শাস্তি চাই।’’ এই ঘটনায় প্রতিবেশীদের দাবি, লজ্জায় মুখ দেখাবে না বলেই এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। যখন বাড়ি ফিরল, তখনও বোঝা যায়নি, তারা কেউ কীটনাশক খেয়েছে। এই বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা আক্ষেপ করে বলে, ‘‘আমাদের সঙ্গে কথা বললে মরতে হত না বড়ো মেয়েকে।”
এরাজ্যে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছেন একাধিক মহিলা। এমনকি ছোটো শিশুরাও এই নারকীয় অত্যাচার থেকে রেহাই পান না। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের বিভিন্নপ্রান্তে এধরণের ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই সমাজের নিরাপত্তার বিষয়ে বারংবার প্রশ্ন উঠছে। তবে জলপাইগুড়ির এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই নজিরবিহীন।