Homeএখন খবরইরফানের স্মৃতিতে নিজেদের গ্রামের নাম বদলে ফেললেন স্থানীয় বাসিন্দারা

ইরফানের স্মৃতিতে নিজেদের গ্রামের নাম বদলে ফেললেন স্থানীয় বাসিন্দারা

নিজস্ব সংবাদদাতা: নাম বদলের হিড়িক কম দেখেনি দেশ। গত একদশকে দেশের কয়েক ডজন জায়গার নাম বদলে হালে ইলাহবাদ হয়েছে প্রয়াগরাজ। প্রস্তাবিত বদলের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা, আহমেদাবাদ থেকে কর্ণাবতী, হায়দ্রাবাদ থেকে ভাগ্যনগর সহ কয়েকশ নাম আছে। এই সব নাম বদলের পেছনে ইতিহাস, রাজনীতি মায় ধর্মনীতি অবধি রয়ে গেছে। কিন্তু একটা মানুষের জন্য, মানবতাকে সম্মান দেখিয়ে গ্রামের নাম বদলে দেওয়ার নজির গড়ল মহারাষ্ট্রের একটি প্ৰান্তিক গ্রাম। গত এপ্রিলে প্রয়াত হয়েছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা ইরফান খান। ইরফানের মৃত্যুতে বলিউডের পাশাপাশি হলিউড স্টাররাও শোক প্রকাশ করতে শুরু করেন। ইরফানের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার প্রয়াত অভিনেতার নামে নিজেদের গ্রামের নামকরণ করল মহারাষ্ট্রের একটি গ্রাম।

রিপোর্টে প্রকাশ, নাসিক জেলা সদর থেকে ৪৫.৫ কিলোমিটার দুরে একটি জায়গার নাম ইগতপুরি। ইগতপুরি জায়গাটি বেশ প্রসিদ্ধ। একটা ছোট রেল স্টেশন রয়েছে এখানে। এখান থেকে আরও ১০.৫কিলোমিটার দুরে রয়েছে কয়েক’শ বছরের পুরানো একটি কেল্লা। জায়গাটার নাম ত্রিলঙ্গওয়াড়ি। মহারাষ্ট্র টাইমস অনুসারে জানা যাচ্ছে, ওই গ্রামে নিজের বাগান বাড়ি তৈরি করবেন বলে জমি কিনেছিলেন ইরফান। এই ফাঁকা জায়গা থেকে অনেকটা দুরে একটি গ্রামের নাম পতরচাওয়াডা যা কিনা ওই ত্রিলঙ্গওয়াড়ির ফাঁকা জায়গার একমাত্র প্রতিবেশী গ্রাম পতরচাওয়াডা।

কয়েকবছর আগে ইরফান যখন এখানেফার্ম হাউস বানাতে এলেন তখনই আলাপ হয়ে যায় ওই প্রতিবেশী গ্রামটির সাথে। ভারতের আর শত শত গ্রামের মতই হত দরিদ্র কিন্তু পবিত্র মনের গ্রামবাসীরা ভালবেসে ফেলেন ইরফানকে। ইরফান সেখানকার দুঃস্থ পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন তিনি। শুধু তাই নয়, গ্রামে স্কুল খুলতে উদ্যোগী হন ইরফান। সেই স্কুলের খরচও বেশ কিছু অংশে বহন করেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেখানকার দুঃস্থ শিশুদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের বইপত্রও কিনে দেন ইরফান। শিশুদের জন্য রেইনকোট, সবার জন্য সোয়েটার আর উৎসব আনন্দের মরশুমে মিষ্টি, ফল যেত ওই গ্রামে ইরফানের তরফে।

অসুস্থ আর প্রসূতিরা যাতে দ্রুত দুরের শহরের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারেন তাই গ্রামের মানুষের জন্য কিনে দেন অ্যাম্বুলেন্স। ইরফান নিজে যখন চরম অসুস্থ তখনও ভুলে যাননি ওই গ্রামটিকে। আমেরিকা থেকে চিকিৎসা করে ফেরার পরও নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন, পাঠিয়েছেন প্রয়োজনীয় উপাদান। ইরফানের অসুস্থতার দিনগুলিতে প্রার্থনা করত গোটা গ্রাম। আর ২৯ শে এপ্রিল, সাত সকালে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়েছিল সেই দুঃসংবাদ, প্রয়াত ইরফান। সেদিন হাঁড়ি চড়েনি কোনও বাড়িতে। সম্প্রতি সেই পতরচাওয়াডা গ্রামের মানুষেরা বদলে ফেলেছে গ্রামের নাম, নাম রেখেছেন ‘হিরো চি বাঢি’ মারাঠি ভাষায় যার অর্থ ‘নায়কের প্রতিবেশী।’

RELATED ARTICLES

Most Popular