Homeএখন খবরপ্রত্যাশা মতই বাতিলই হয়ে গেল মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক! হতাশ শিক্ষক মহলের একাংশ

প্রত্যাশা মতই বাতিলই হয়ে গেল মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক! হতাশ শিক্ষক মহলের একাংশ

নিজস্ব সংবাদদাতা: কেন্দ্রীয় ২টি বোর্ড CBSE এবং ICSE দ্বাদশ শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষা বাতিল করার পরই ভবিষ্যত নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের। বাকি ছিল শুধু একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে এই রাজ্যেও একই পদ্ধতিতে হাঁটা হবে। রবিবারই একটি বিশেষজ কমিটি তৈরি করে ওই কমিটিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ভবিষ্যৎ গ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মতামত চাওয়া হয়েছিল ছাত্রছাত্রী, অভিবাভাবক আর জনসাধারনের। কেবল মতামত চাওয়া হয়নি শিক্ষক বা শিক্ষক সংগঠনগুলির। তখুনি কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, পরীক্ষা বাতিলের পথেই হাঁটছে রাজ্য। সোমবার সেই সেই আশঙ্কায় সীলমোহর দিল বিশেষজ্ঞ কমিটি। এবছরের মত বাতিল করে দেওয়া হল মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।

সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে এই বাতিলের কথা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । কীভাবে মূল্যায়ন হবে তা ৭ দিনের মধ্যে জানানো হবে বলে এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে জনমতকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, মাধ্যমিক না হওয়ার পক্ষে জনমত পড়েছে ৭৯ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক না হওয়ার পক্ষে জনমত পড়েছে ৮৩ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে ৩৪ হাজার ইমেল পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের কাছে।তবে ছাত্রছাত্রীদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেব্যাপারে লক্ষ্য রাখছে সরকার। পরীক্ষা বাতিল হলেও মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে এদিন ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে কীভাবে মূল্যায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উচ্চ শিক্ষা সংসদ এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের আলোচনার ভিত্তিতে আগামী সাতদিনের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু মূল্যায়ন হবে, সেটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ শিক্ষা সংসদ এবং শিক্ষা দফতর একসঙ্গে বসে সেটা দেখে নেবে। বিশেষজ্ঞ কমিটিরও মত আছে। তবে দেখে নিতে হবে, বাচ্চাদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়।’ সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় দিকটি মাথায় রাখতে হবে। কারণ সর্বভারতীয় স্তরে পরীক্ষায় বসেন পড়ুয়ারা। তাই সিবিএসইয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা যে কোনও উচ্চশিক্ষায় প্রতিযোগিতা করতে পারে, সেটা দেখে নিতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি করতে হবে।’

যদিও শিক্ষক সংগঠনের একাংশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের হতাশ। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি সংগঠন সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতি বলেছেন, ” মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করেছে। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাই।পরীক্ষার কোনো বিকল্প নাই।সংক্রমণ দ্রুত কমছে।ছাত্র ছাত্রীর পড়াশোনায় মন না দিয়ে হতাশায় অন লাইন গেমের খেলায় হারিয়ে যাচ্ছে।একটা প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।রাজ্যের প্রায় সব শিক্ষক সংগঠন এই পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।এতে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে মাত্র পনের দিনের গ্যাপ থেকে।বিশেষ পরীক্ষা স্পেশাল ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করা হোক।শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে,উপযুক্ত ভাবে স্যানিটাইজ করে, হোম সেন্টার করে পরীক্ষা নেওয়া হোক। অন্যথায় উপযুক্ত মেধা তার মূল্য পাবেনা। আমরা সকল রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”

পরীক্ষা বাতিলের বিরূদ্ধে দাঁড়িয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী ইতোপূর্বেই জানিয়েছিলেন যে, ” প্রয়োজনে কম নম্বরে এবং কম সময়ে বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হোক হোমসেন্টার বা নিজস্ব স্কুলেই। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার দিকে নজর দিয়ে কঠোর করোনা বিধির মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়া হোক। পরীক্ষা বাতিল হলে বাতিল বর্ষের উর্ত্তীণ পড়ুয়াদের সাথে পরীক্ষা দিয়ে উর্ত্তীণ পড়ুয়াদের একটি সামাজিক বিভেদ তৈরি হতে পারে এবং তাঁদের ভবিষ্যত ও পেশাগত জীবনে প্রভাব পড়তে পারে। এটা কখনওই কাম্য নয়।”

সরকার যে পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েই লোক দেখানো কমিটি গড়েছিলেন তা ইঙ্গিত করে কিংকর অধিকারী বলেন, “গতকাল ঘোষণার পর শিক্ষা দপ্তরে ৩৪ হাজার মেল এসে পৌঁছালো আজ বেলা দুটো পর্যন্ত। আর তার কয়েক মিনিট পরেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়ে গেল। যেন ভোটের রেজাল্ট। বিচার বিশ্লেষণের কোনো প্রয়োজন নেই! সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে কোনদিন সত্য নির্ধারণ হয় না, যুক্তি দিয়ে যে সত্য যাচাই করতে হয় তাকে অস্বীকার করা হল।
সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নজির সৃষ্টি হতে চলেছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মঙ্গল হবে না বরং তাদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হল। ন্যূনতম গুণগত মান যাচাই না করে ভালো-মন্দ সকলকে এক আসনে বসানো হলো। এর ফলে ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা বিরাট ধাক্কা খাবে। ‘নো ডিটেনশন পলিসি’, ‘অনলাইন এডুকেশন সিস্টেম’ কিংবা ‘ওপেন বুক এক্সাম’ ইত্যাদির মত গুণগতমান ও শিক্ষাবিরোধী পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সরকার এগিয়ে গেল। এর ফলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান অত্যন্ত সংকটের দিকে এগোবে সন্দেহ নেই। শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে গুণগত পার্থক্য আরো আরো কমে আসবে। যা সামগ্রিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এক অশনী সংকেত।”

 

RELATED ARTICLES

Most Popular