Homeএখন খবর'কেন তোর ফোনটা ধরলাম না!' অনুশোচনায় মাথা খুঁড়ছেন সুশান্তের প্রিয় মহেশ

‘কেন তোর ফোনটা ধরলাম না!’ অনুশোচনায় মাথা খুঁড়ছেন সুশান্তের প্রিয় মহেশ

তিতলী সেনগুপ্ত: হয়না, অনেক সময়ই হয়না। হয়না দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা কিংবা অন্য কোনও কারনে দীর্ঘক্ষণ ফোন বেজেই চলে প্রিয়জনের ফোনটা। কখনো বা কেউ ফোন করলে ভিডিও গেম খেলার নেশায় এতটাই আসক্ত থাকি যে সেই সময় কেউ ফোন করলে বিরক্তের সাথে ফোনটা কেটে দেওয়া। অথচ ও প্রান্তের মানুষটির তখন ,সেই মূহুর্তেই সেই কথাটি বলার যা তাঁকে বাঁচিয়ে দিত!অন্ততঃ সেই ক্ষনের জন্য। হয় তো বা মিনিট খানেকর কথা বদলে দিত তাঁর জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্তকে। সে রকমই একটা ফোনের জন্য মাথা খুঁড়ে চলেছেন মহেশ শেট্টি।

৫ দিন আগে সুশান্ত সিং রাজপুতের ২টি ফোন ধরতে পারেননি সুশান্তের প্রিয় বন্ধু মহেশ এবং বান্ধবী। হয়ত জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁর প্রিয় বন্ধু মহেশ শেট্টি ও ‘প্রেমিকা’ রিয়া চক্রবর্তী-কে শেষ ফোন দুটি করেছিলেন সুশান্ত। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত কেউই তাঁর ফীন ধরেননি, কিংবা ধরতে পারেন নি৷ অথচ এমনটা হতেই পারতো, যদি তাদের মধ্যে কেউ একজন অন্ততঃ ফোনটা ধরতেন তাহলে হয়তো আজ সুশান্তের এই পরিণতি হতো না।

গত ১৪ ই জুন অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসেম জানা যায় তিনি দীর্ঘদিন মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সুশান্তের ফোনের কল লিস্ট চেক করে জানা যায় সুশান্ত মৃত্যুর আগে রাতে শেষ ফোনটি করেছিলেন তার দীর্ঘ ১৩ বছরের বন্ধু ‘পবিত্র রিশতা’ ধারাবাহিকের কো-স্টার মহেশ শেট্টিকে। কিন্তু কোনো কারণে সেই রাতে ফোনটি ধরতে পারেননি মহেশ। সুশান্ত-মহেশ- দীর্ঘ ১৩ বছর একে অপরের বন্ধু। বলিউডের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায় সুশান্ত ও মহেশ ভাই বলেই পরিচিত। একে অপরের বহু সুখ-দুঃখ, ভালো ও কঠিন মূহুর্তে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাল হয়ে৷ কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্তে যখন প্রিয় বন্ধুকে পাশে চেয়েছিলেন সুশান্ত, সেই মূহুর্তে পাশে থাকতে পারলেন না মহেশ। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে ৫ টা দিন, এখনো ‘শক’ কাটিয়ে উঠতে পারেননি ব্রেস্ট ফ্রেন্ড মহেশ শেট্টি। শুধু শক নয় সেই সাথে একঝাঁক আক্ষেপ ও অনুশোচনা, “কেন ওর শেষ ফোনটা ধরতে পারলাম না?” এই প্রশ্নই গত কয়েকদিন ধরে তাড়া করে বেড়াচ্ছে মহেশকে। সুশান্তের মৃত্যুর পর পরই জানা গিয়েছে, আত্মহত্যা করার আগে শেষ ফোনটি সে তাঁর প্রিয় বন্ধু মহেশ শেট্টিকে করেছিলেন, কিন্তু কথা হয়নি। বৃহস্পতিবার বন্ধুকে নিয়ে লেখা দীর্ঘ পোস্ট সেই ফোনের কথা নিজের মুখেই স্বীকার করে নিলেন মহেশ। অনুশোচনা যেমন আছে তেমন রাগও আছে, “কিভাবে সুশান্ত ১৩ বছরের বন্ধুত্বটা ছেড়ে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?”

বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে নিজের ভাই,প্রিয় বন্ধু-র জন্য আবেগঘন বার্তা লিখলেন সুশান্তের ‘জান’ মহেশ শেট্টি। তিনি লেখেন,” এটা একটা অদ্ভূত অনুভূতি..আমার অনেক কিছু বলবার রয়েছে,কিন্তু তবুও আমি বাকরুদ্ধ। জীবনে কখনও কখনও তোমার এমন কিছু মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত হয়,যে দেখা মাত্রও তুমি তাঁর সঙ্গে এক অদ্ভূত বাঁধনে জড়িয়ে পড়, মনে হয় যেন সারাজীবন ধরে ওকে চেন। তুমি বুঝতে পারো যে ভাই হতে গেলে এক মায়ের গর্ভ থেকে জন্মানোটা সবসময় জরুরি নয়। এইভাবেই আমাদের দেখা..ভাই হিসাবে। আমরা দুজনেই ভীষণ ইন্ট্রোভার্ট আর বন্ধুত্বের ব্যাপারে দুজনেই ভীষণ পুরোনো পন্থী, দুজনেই নিজেদের জগতে থাকতে ভালোবাসা দুই মানুষ৷ আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করা, (ওর এই পৃথিবীর যে কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলবার দক্ষতা রাখে) খাবার,ছবি, বই, প্রকৃতি,বিজ্ঞান,সম্পর্ক আর অনেক অনেক ‘বকওয়াস’….ও হচ্ছে এক ক্যান্ডির দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ছেলে, ওর মধ্যে একটা অফুরন্ত এনার্জি এবং অগাধ স্বপ্নের একটা ভান্ডার ছিল,যা অনেক সময়ই ভীষণ ছোঁয়াছে।”

মহেশ আরও লেখেন, ” সুশান্তের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব লোকদেখানো নয় আমাদের এই রিসতা সত্যিই ‘পবিত্র’। আমাদের এই সম্পর্কটা ভারী অদ্ভূত, কোনওদিনও দেখনদারি ছিল না ভালোবাসাটা জাহির করবার। দুজনের জন্যই এটা ভীষণ পবিত্র। যদি আমি ওই সব মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করতাম তাহলে অন্তত আমি কিছু একটা আঁকড়ে ধরে থাকতে পারতাম বাকি জীবনটা। কিন্তু হ্যাঁ, তবুও আমি ধন্য,যে আমার কাছে ১৩ বছর লম্বা একটা যাত্রাপথ রয়েছে, যা সাজানো অনেক স্মৃতি দিয়ে..সেগুলো আমি যত্ন করে গুছিয়ে রাখব।ওর সাফল্য, ওর প্রাপ্তি, ওর কাজ…ও সবক্ষেত্রে একজন পারফেকশানিস্ট,আমি যাই বলি না কেন কোনওদিন ওর মতো একটা জিনিয়াসকে আমি বলে বুঝিয়ে উঠতে পারব না। আমি কোনওদিনও ভাবিনি আমি তোকে নিয়ে এই সব লিখব। আমরা তো একসঙ্গে নিজেদের অবসর জীবনটাও প্ল্যান করেছিলাম আর এখন..আমি সবসময় জানতাম তুই ওঁনার খুব কাছের..তাই বলে তোকে এত তাড়াতাড়ি নিজের কাছে ডেকে নেবে!! তবে আমি আজীবন তোর উত্তরাধিকার নিজের মনের ভিতর বয়ে বেড়াব, আমি সেটা নষ্ট হতে দেব না। যদি এই পৃথিবীর তোর জীবনটাকেও ততটাই সেলিব্রেট করতে পারত,যতটা ওর কাজকে করেছে। মনে হচ্ছে আমার ভিতর একটা বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়ে গিয়েছে,যা আর কোনওদিনও পূরণ হবে না। আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা একে অপরের পাশে ছিলাম, সবসময় একজনের পাশে অন্যজন। আমি দুঃখিত!! কিন্তু আমি অনেক অসন্তোষ নিয়েই বাঁচব। যদি আমি তোর মনের দরজাটা পুরোপুরিভাবে খুলতে পারতাম…তুই জানতিস তোর সঙ্গে শেট্টি আছে সবসময় আর থাকবেও। তাহলে কেন? একবার কথা তো বলতিস ইয়ার! যদি ওই ফোন কলটা আমি ধরতাম..জীবন তো আর এক রইল না রে!! আমি জানি ওই তারাগুলো তুই কতটা ভালোবাসতি…বিশ্বাস কর মায়ের দিব্বি দিয়ে বলছি প্রতিদিন রাতের আকাশে আমি ওই দিকেই তাকিয়ে থাকব ভাই।”

গত ২১ মে মহেশের জন্মদিন ছিল। সেদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সুশান্ত বন্ধুর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘আই লাভ ইউ মেরি জান’। জবাবে কমেন্ট বক্সে মহেশ লেখেন, ধন্যবাদ..মেরে জান’। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সুশান্ত-মহেশ একে অপরের কতটা পরিপূরক ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রিয় বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়াটা কিছুত্রি মেনে নিতে পারছে না মহেশ শেট্টি। সেই সাথে সুশান্তের শেষ ফোনটা ধরতে না পারার অনুশোচনা ভিতর ভিতর দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে সুশান্তের প্রিয় বন্ধুকে। মাথা খুঁড়ছেন কিন্তু সে তো আর ফিরবেনা!

RELATED ARTICLES

Most Popular