Homeএখন খবরখড়গপুর রেল বাংলোতে লাখে নয় চুরি হয়েছে কোটিতে, খামে খামে টাকা রাখাছিল...

খড়গপুর রেল বাংলোতে লাখে নয় চুরি হয়েছে কোটিতে, খামে খামে টাকা রাখাছিল কেন? জিজ্ঞাস্য পুলিশের

বিশেষ সংবাদদাতা: চল্লিশ লাখ নয় অন্ততঃ কোটি টাকা চুরি হয়েছে রেল আধিকারিকের বাংলো থেকে এমনটাই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। সম্ভাব্য শনিবারের রাতে রেলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেটিং ম্যানেজার বা ডিওএম বিনীত কুমার গুপ্তার বাংলোতে চুরির তদন্তে নেমে পুলিশের এও মনে হয়েছে পদমর্যাদা ও বেতনক্রমের দিক থেকে যে পরিমান অর্থ ও সোনা,গহনা ও তৈজসপত্র ইত্যাদি বাংলোতে ছিল তা থাকার কথা নয়। পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য এমনটা নয় যে, ওই আধিকারিক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হতে পারেননা, পুলিশের বক্তব্য হল এত টাকা বা সম্পদ তিনি বাড়িতে রেখেছিলেন কেন?

রবিবার পুলিশ ওই আধিকারিকের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে যে হিসাব পেয়েছিল তাতে দেখা গেছে ওই বাংলোতে ছিল নগদ চার লক্ষ টাকা ছাড়াও চুরি হয়েছে ১০ থেকে ১৫টি স্বর্নমুদ্রা, আনুমানিক ৪কেজি রুপোর গহনা, মুর্ত্তি,বাসন ইত্যাদি, ২টি হীরক খচিত হাতের বালা। পুলিশের বক্তব্য যদি ধরেই নেওয়া হয় ওই পরিমানই সম্পদ ছিল তবে কিসের জন্য এত সম্পদ কেন ব্যাঙ্কে, লকারে রাখা হতনা? তাহলে কি আইনের বাইরে অর্জিত সম্পদ রাখা হত বাড়িতে? পুলিশের বক্তব্য নগদ চার লাখ টাকার কথা বাদ দিলেও অতগুলি স্বর্নমুদ্রা কেন বাড়িতে রাখা হয়েছিল? ২টি হীরকখচিত বালা কেন ব্যাঙ্কের লকারে রাখা হয়নি?

পুলিশের কাছে সব চেয়ে বড় আশ্চর্য মনে হয়েছে বাড়ির বিভিন্ন অংশে পাওয়া ডজনেরও বেশি খাম। নাম ঠিকানা ছাড়াই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খামে কী ছিল? পুলিশের অনুমান টাকা। খামে করে টাকা কেন রাখা হয়েছিল? নাকি খামে করে কেউ টাকা দিত সেই টাকা রাখা হয়েছিল? রেল সূত্রে জানা গেছে রেলের বেতন খামে করে হয়না এখন সবই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে অনলাইনে। যে চার লাখ টাকার কথা বলা হচ্ছে তা কী ওই খামেই রাখা ছিল? পুলিশ অবশ্য বলছে চার লক্ষ নয়, খামের সংখ্যা বলছে ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার নোটে রাখা হলে সংখ্যাটা ১০লক্ষ হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব নয়।

পুলিশ উদ্ধার হওয়া খামের সংখ্যা তদন্তের স্বার্থে বলতে চায়নি তবে বলেছে খাম গুলিতে কি নোট এবং কত পরিমান নোট থাকতে পারে তা সহজেই ফরেনসিক এক্সপার্টরা বের করে নিতে পারেন। দীর্ঘ দিন খামের মধ্যে টাকা থাকলে, কোনোও চাপের মধ্যে যেমন বিছানার নিচে, বইয়ের খাঁজে খামের মধ্যে টাকা থাকলে খামে তার ছাপ থেকে যায় যা বিশেষ পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
বিনীত কুমার গুপ্তা শীর্ষ অপারেটিং ম্যানেজার ছিলেন। বিভিন্ন কোম্পানি, সংস্থা যারা রেলের মাধমের তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্য আদান প্রদান বা বিভিন্ন অন্য কোম্পানি বা সংস্থাকে পরিবহন সংক্রান্ত পরিষেবা প্রদান করে থাকে তাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকতেই পারে। পরিবহন সংক্রান্ত বিষয় পুরোটাই গুপ্তার অধীনে তাই তাঁর সুযোগ রয়েছে আইন বহির্ভূত সুযোগ নেওয়ার। যদিও তিনি সেই সুযোগ নিয়েছিলেন কিনা সেটা এখনও বোঝা যায়নি।

uপুলিশের বক্তব্য ওই আধিকারিকের বাংলো থেকে নগদ ও গহনা, সরঞ্জাম মিলিয়ে অন্ততঃ ৪০লক্ষ টাকা মূল্যের সম্পত্তি চুরি হয়েছিল বলে বলা হচ্ছিল তার পরিমান অনেকটাই বেশি। যে দুটি হীরক খচিত সোনার বালার কথা বলা হচ্ছে সেগুলিই একেকটি ৫লাখ টাকার বেশি হতে পারে অনায়াসে। এক পুলিশ আধিকারিকের মতে ওই ধরনের বালায় খচিত একেকটি হীরক খন্ড ৭০ হাজার টাকা মূল্যের কাছাকছি হয়।
মজার ব্যাপার টাকার খাম পাওয়া গেছে ঘরের বিভিন্ন অংশ থেকে অর্থাৎ বিভিন্ন জায়গায় রাখা হত টাকা। পুলিশের প্রশ্ন আয়কর দপ্তরের চোখ এড়াতেই কী এটা করা হত। কেন বলা হয়েছিল সোনার কয়েন ১০ থেকে ১৫টি! সোনার জিনিস তাও আবার কয়েন, তার সঠিক সংখ্যা কেন জানতেননা? এরকম বহু প্রশ্ন উঠছে।

সম্প্রতি বিনীত কলকাতায় বদলি হয়েছিলেন সেই সূত্রেই গত চার পাঁচদিন কলকাতাতেই ছিলেন উনি। সেই সুযোগই এই ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোথাও কোনও কিছু ভাঙা হয়নি। সবই নিখুঁত কায়দায় আলমারি বা অন্যান্য জায়গা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে যার থেকে অনুমান করা হচ্ছে খুবই পরিচিত কেউ এই কাজ করেছে।
পুলিশের বক্তব্য রেলের আউট হাউসে থাকা পরিচারিকা বা অন্যদের মাগনা খাটাতেন বিনীতের স্ত্রী । অবশ্য রেলের বহু আধিকারিকের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ রয়েছে। রেলের আউট হাউসে থাকার সুবিধা, পানীয়জলের সুবিধা পাচ্ছে তারা সুতরাং তারা বিনা পয়সায় আধিকারিকদের ঘরের কাজ করতে বাধ্য এমন ধারনা থেকেই খাটানো হয় আর নতুবা তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। সেই রাগ থেকেই কেউ বা কারা এই ঘটনা ঘটালো কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আর এই আধিকারিকের অর্থনৈতিক বিষয়ের অনুসন্ধান আয়কর দপ্তরের হাতে ছেড়েও দিতে পারে পুলিশ।

RELATED ARTICLES

Most Popular